ব্যবহৃত বাইকের ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে সব তথ্য জানুন
একটি দু’চাকার গাড়ির মালিক সত্যিই গর্বের ব্যাপার, বিশেষত যদি আপনি অল্পবয়সী হন। একটা সময় ছিল যখন যে-কোনও গাড়ির মালিকানা মানেই বিলাসিতার বিষয় ছিল। যদিও এখন ভারতে চার-চাকার গাড়ির মালিকের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু এই শতাব্দীর তরুণ-তরুণীরা এখনও বাইকই বেশি পছন্দ করে।
রোজকার মডেলগুলি ছাড়াও, ভারতীয় বাজারে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং ব্যতিক্রমী ডিজাইন-সহ অভিনব ফ্যান্সি বাইকও পাওয়া যায়। পুরনো বা নতুন যাই হোক না কেন, একটি ভাল বাইক সবসময়ই ভাল থাকে। এমন অনেক ক্রেতা আছেন যারা ভিন্টেজপ্রেমী হওয়ার কারণে পুরনো বাইক পছন্দ করেন।
খাদ্য সরবরাহ, ক্যুরিয়ার এবং অন্যান্য এই ধরনের পরিষেবাগুলিতে দু’চাকার গাড়ির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলস্বরূপ, বাইকের চাহিদা বেড়েই চলেছে, তা সে সেকেন্ড-হ্যান্ড অথবা ঝাঁ-চকচকে নতুন বাইক, যাই হোক না কেন।
ভাল অবস্থায় থাকলে সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কেনা কোনও ঝামেলার বিষয় নয়। তবে যদি আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোথাও পৌঁছাতে হয়, তবে বাইক চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
এর উপরে, ট্র্যাফিক এবং রাস্তাগুলির অবস্থা বেহাল, যার জন্য একটি বাইক ইন্স্যুরেন্স দিয়ে নিজেকে এবং আপনার বাইককে সুরক্ষিত করে তোলা এখন প্রায় এক অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক ইন্স্যুরেন্স কী?
অন্য যে-কোনও টু-হুইলার ইন্স্যুরেন্সের মতো, সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক ইন্স্যুরেন্স থার্ড পার্টির এবং নিজস্ব ক্ষয়-ক্ষতি থেকে একজনকে রক্ষা করে।
কেন একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক ইন্স্যুরেন্স করা প্রয়োজন?
আপনার কেনা সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকটি কি আপনার বেশ সুন্দর লাগছে? হতেই পারে, কিন্তু আগের মালিকের কাছে এটির ব্যবহারের ফলে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে-সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারি না। আপনার সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের জন্য ইন্স্যুরেন্স অপরিহার্য। কেন? আসুন আমরা বুঝে নিই, নিম্নলিখিত অনুমানগুলি মাথায় রেখে:
# মনে করুন, আপনি যে-সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকটি কিনেছেন তার গিয়ার ঢিলে আছে। আপনি যখন ব্যস্ত ট্রাফিকের মধ্যে বাইক চালাচ্ছেন, তখন আপনার গিয়ারগুলি হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিল এবং এইভাবে আপনার রাস্তায় এগিয়ে যাওয়ার সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এই দুর্ঘটনায় আপনার বাইকের মাডগার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হ্যান্ডেলটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে।
এই ক্ষেত্রে, ইন্স্যুরেন্স আপনার বাইকের ক্ষতির মেরামতের জন্য খরচ কভার করবে। তাই, যে-কোনও পরিস্থিতিতেই আপনার সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের জন্য ইন্স্যুরেন্স পলিসি অপরিহার্য।
#যদি আপনি কোনও পথচারীর (থার্ড-পার্টি) রাস্তা পার হওয়ার সময় তাঁকে আঘাত করেন তবে একটি ইন্স্যুরেন্স কভার আপনাকে এর ফলে ঘটা আইনি দায় থেকে বাঁচাবে। শেষের কয়েক মিনিটে ট্রাফিক সিগন্যালে যখন হলুদ আলো ছিল, আপনি রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করলেন এবং একই সময়ে, একজন পথচারীও তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে গেলেন। পরের মুহূর্তেই আপনারা উভয়েই দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়লেন। আপনার আঘাত তাঁকে রাস্তায় ফেলে দিল, যার ফলে তাঁর হাতে ফ্র্যাকচার হল।
এটি সম্পূর্ণভাবে আপনার দোষ ছিল এবং সেইজন্য আপনিই ক্ষতির জন্য অর্থ দিতে দায়বদ্ধ থাকবেন। একটি ইন্স্যুরেন্স পলিসি থার্ড পার্টির শারীরিক আঘাতের জন্য আপনাকে যে-খরচ বহন করতে হবে তার জন্য অর্থ প্রদান করবে।
#ড্রাইভিং করার সময় ট্রাফিক নিয়মগুলি মেনে চলা বাধ্যতামূলক। শুধু নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয়, রাস্তায় অন্যদের আঘাত করা থেকে আটকানোর জন্যও।
একটা সন্ধ্যার কথা ভাবুন, যখন একদল ছেলে রোজকার মতো বাইক চালাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজন, যে একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কিনেছিল, সে সেটির গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ রাস্তার ডান দিক থেকে একটি গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে বাইকের চালক পড়ে গিয়ে মারা যায়। তার একটি ইন্স্যুরেন্স কভার ছিল যেখানে সে মালিক-চালকের জন্য বাধ্যতামূলক পিএ (PA) কভার বেছে নিয়েছিল। এটি মৃত্যু এবং অক্ষমতার ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকের নমিনিকে অর্থ প্রদান করবে।
দুর্ঘটনার কারণে আঘাত হলে তার চিকিৎসার জন্য আর্থিক বোঝা দূরে রাখতে আমাদের বাইক ইন্স্যুরেন্স প্রয়োজন। আপনার সেকেন্ড হ্যান্ড বাইকের ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম জানতে বাইক ইন্স্যুরেন্স ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন।
সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক ইন্স্যুরেন্সের সাথে অ্যাড-অন কভার
সাধারণ কম্প্রিহেন্সিভ বাইক ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও, কভারেজ বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়, যদি তা সম্ভব হয়। কিছু অ্যাড-অন কভার যেগুলি বেছে নেওয়া যেতে পারে:
কিছু দুর্ঘটনা সত্যিই মারাত্মক। আগে কম্প্রিহেন্সিভ ইন্স্যুরেন্স পলিসির অধীনে, শুধুমাত্র মালিককে কভার করা হতো। পরবর্তী কালে, বাইকের পিছনে বসা আরোহীর জন্যও নিরাপত্তা কভার যোগ করে পলিসিটিকে উন্নত করা হয়।
আইআরডিএ (IRDA) পিছনে বসা আরোহীকে থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি পলিসির আওতায় আনার ব্যবস্থা করেছে। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, পিছনের আরোহীকে 3 লক্ষ টাকার কভার দেওয়া হবে। এবং তিনি মারা গেলে, তার পরের আত্মীয়কে 5 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বাইকের মালিকানা এবং ইন্স্যুরেন্স ট্রান্সফার করুন
সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের মালিকানা তখনই আপনার হবে যখন গাড়িটির আরসি (RC) আপনার নামে হবে। সুতরাং, বাইক নিয়ে বাইরে বেরোনোর আগে, সমস্ত প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপনার নামে আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আপনি ট্রান্সফারের অনুরোধ করার আগে, যে-আরটিও (RTO) থেকে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল সেখান থেকে আপনাকে একটি এনওসি (NOC) সংগ্রহ করতে হবে। যদি গাড়িটি লোনে কেনা হয়, তাহলে আরটিও-র (RTO) পাশাপাশি ব্যাঙ্কের কাছ থেকেও একটি এনওসি (NOC) জোগাড় করতে হবে।
আপনার সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের মালিকানা ট্রান্সফার সম্পূর্ণ করতে, আপনাকে কিছু নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে এবং মালিকানা হস্তান্তর করতে প্রায় 10-15 দিন সময় লাগবে। ইতিমধ্যে, বাইকের ইন্স্যুরেন্স পলিসি আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। যদি থাকে, তাহলে সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি ইন্স্যুরেন্স ট্রান্সফার করতে চান, নাকি আপনি পছন্দসই ইন্স্যুরেন্স প্রদানকারীর কাছ থেকে একটি নতুন ইন্স্যুরেন্স পলিসি কিনবেন।
ধরুন ইন্স্যুরেন্স পলিসিটি বিদ্যমান এবং আপনি এটি নিজের নামে ট্রান্সফার করতে চান। এই ক্ষেত্রে, বাইকের পূর্ববর্তী মালিককে ইন্স্যুরেন্স পলিসি, পরিচয়ের প্রমাণপত্র, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের কপি এবং ফর্ম 20 ও ফর্ম 30-র ফটোকপি নিয়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যেতে হবে। নাম পরিবর্তনের অনুরোধটি কার্যকর করতে ইন্স্যুরেন্স প্রদানকারীর প্রায় 15 দিন সময় লাগতে পারে।
সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কেনার সময় যে-বিষয়গুলি দেখে নিতে হবে
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সুবিধা/বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ না করে কোনও কিছু কেনেন বা বাছেন না। যখন বিষয়টি একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের, তখন আপনাকে এটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে হবে। সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কেনার আগে আপনাকে যে-কয়েকটি জিনিস পরীক্ষা করতে হবে তা হল:
- বাইকটিকে সরাসরি পরিদর্শন করুন: বাইকটিকে খুব খুঁটিয়ে দেখুন এবং আপনি যা-যা দেখছেন সেগুলি নিয়ে গবেষণা করুন। আপনার চোখ খোলা রাখুন এবং সজাগ থাকুন। কোনও স্ক্র্যাচ বা আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা তাও দেখুন।
- অস্বাভাবিক শব্দের জন্য পরীক্ষা করুন: বাইকটি চালু করুন এবং এটি দাঁড়ানো অবস্থায় ও চালানোর সময় কোনও শব্দ করে কিনা তা পরীক্ষা করুন। এগুলি ছাড়াও, ইন্ডিকেটর, লাইট এবং হর্নগুলি পরীক্ষা করুন কোনও শব্দ হচ্ছে কিনা।
- সমস্ত নথি যাচাই করুন: ইঞ্জিনে উল্লিখিত একই শনাক্তকরণ নম্বর আরসি-তে (RC) আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। যখন আপনি কোনও ক্লেম করবেন, তখন এ ধরনের কোনও অমিল সমস্যা তৈরি করবে।
- সার্ভিসের বিশদ বিবরণ জানুন: আপনার বাইকের মালিককে সার্ভিসের ফ্রিকোয়েন্সি এবং এটি কোথায় সার্ভিস করা হয়েছিল সে-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন।
- টেস্ট রাইড করুন: আপনি বাইকের একবার টেস্ট ড্রাইভ নিয়ে দেখুন। একটি ঢালু রাস্তা বেছে নিন যেখানে আপনি বাইকের পারফরম্যান্সের সর্বোত্তম মূল্যায়ন করতে পারবেন। এর সাসপেনশন এবং ব্রেকের ক্ষমতা তখনই বোঝা যাবে।
তাহলে, আপনি সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কেনার আগে চেকলিস্ট পেয়ে গিয়েছেন। মালিকানা হস্তান্তর এবং আপনার নামে ইন্স্যুরেন্স ট্রান্সফার করার পদ্ধতিও জেনে গিয়েছেন। কিন্তু আপনি যদি একটি নতুন ইন্স্যুরেন্স পলিসি চান? এই ছোট সমস্যাগুলি কি আপনাকে খুব চিন্তিত করছে? আসুন দেখি কিভাবে আমরা সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের জন্য নতুন ইন্স্যুরেন্স পেতে পারি।
আপনার সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের জন্য নতুন ইন্স্যুরেন্স কিনতে চান?
যদি আপনার সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকটিতে বৈধ ইন্স্যুরেন্স না থাকে, বা আপনি যদি বর্তমান পলিসিটি নিয়ে খুব একটা খুশি না হন, তাহলে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকের জন্য একটি নতুন ইন্স্যুরেন্স পলিসি কিনতে পারেন:
# বেশিরভাগ ইন্স্যুরেন্স প্রদানকারীদের অনলাইন পদ্ধতি রয়েছে। অনলাইনে তাদের ওয়েবসাইট দেখুন।
# অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আপনার আরসি-র (RC) স্ক্যান-করা কপি, ইনভয়েসের কপি এবং পরিচয়ের প্রমাণপত্র জমা দিন। অথবা আপনি রেজিস্ট্রেশনের শহর, মডেলের নাম এবং ভ্যারিয়েন্ট, এবং রেজিস্ট্রেশনের তারিখ সহজেই লিখতে পারেন।
# ইন্স্যুরেন্স প্রদানকারী একটি ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করবে, তার পরে আপনি প্রিমিয়াম দিতে পারবেন।
# কোনওরকম অপেক্ষা করতে হবে না এবং আপনি সহজেই আপনার ইন্স্যুরেন্সের কপি পেয়ে যাবেন।
অবশেষে, আপনি নিজের স্বপ্নের বাইকের মালিক হয়েছেন। মনে রাখবেন, জীবনে অ্যাডভেঞ্চার আছে, তবে এই জীবন খুবই মূল্যবান। আপনি যে-বাইকটি কিনেছেন, এমনকি সেটি ব্যবহৃত হলেও, দাম দিয়েই তা কিনেছেন। তাই সুনিশ্চিত করুন যে আপনি বাইক চালানোর সময় নিরাপত্তা মেনে চলছেন। এটি কেবল আপনাকেই নয়, রাস্তায় চলা মানুষটিকেও বাঁচাবে।