অনলাইনে হেলথ ইন্সুরেন্স কিনুন

2011 সালের জনগণনার হিসেবে, ভারতে 26.8 মিলিয়নেরও বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি (পিডব্লিউডি) আছে - যা মোট জনসংখ্যার প্রায় 2.2%, যদিও অন্যান্য উৎসে এই অনুমান আরও বেশি দেখায়। যখন আপনার শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকে, তখন দৈনন্দিন জীবনধারণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে, সাথে চিকিৎসার অতিরিক্ত খরচ বা আর্থিক চাপের কথা তো না বলাই ভাল।

যেহেতু হেল্থ ইনস্যুরেন্স চিকিৎসা খরচের ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়ার অন্যতম সেরা উপায়, তাই আপনি হয়তো ভাবছেন "ভারতে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য কোনও হেলথ ইনস্যুরেন্স আছে কিনা?"। তাহলে আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করি যে, আছে।

প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প আছে, কিন্তু এগুলির কভারেজ সীমিত। কিছু বেসরকারী ইনস্যুরারও হেল্থ ইনস্যুরেন্স প্ল্যান অফার করে, যদিও এগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব ব্যয়বহুল। আসুন প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য উপলব্ধ ইনস্যুরেন্স সুবিধাগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক:

ভারতে, প্রতিবন্ধী মানুষদের (সমান সুযোগ, অধিকার সুরক্ষা এবং সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ) আইন, 1955 এর অধীনে, একজন মানুষ যার কমপক্ষে 40% প্রতিবন্ধকতা আছে তাকে প্রতিবন্ধী হিসাবে ধরা হয়। যদি তাদের একাধিক বা 80% এর বেশি প্রতিবন্ধকতা থাকে, তবে তাদের গুরুতর প্রতিবন্ধী হিসাবে ধরা হয়।

ভারতে প্রতিবন্ধকতাকে তিনটি প্রধান ধরনে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে:

• জন্মগত প্রতিবন্ধকতা - এগুলি এমন অবস্থা যা জন্ম থেকেই বংশগত বা কিছু পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। কিছু সাধারণ উদাহরণের মধ্যে আছে হার্টের সমস্যা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, স্পাইনা বিফিডা, ডাউনস সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি ইত্যাদি।
• দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবন্ধকতা - যখন কেউ একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ফলে তার সম্পূর্ণ, আংশিক বা অস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা দেখতে পাওয়া যায়, তখন এটি হয়। এর মধ্যে হাত বা পা ভাঙা, একটি হাত বা পা হারানো, দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি হ্রাস, পক্ষাঘাত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
• মানসিক প্রতিবন্ধকতা - এটি একটি মানসিক ব্যাধি বা অসুস্থতাকে বোঝায় যা একজন মানুষের মেজাজ, আচরণ, চিন্তাভাবনা এবং মানসিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে। বিষণ্নতা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, স্মৃতিভ্রংশ, সেইসাথে স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক ব্যাধি এবং অটিজমের মতো বিকাশজনিত ব্যাধি এর মধ্যে পড়ে।

আপনি সরকারের হেল্থ ইনস্যুরেন্স প্ল্যান কিনুন বা একটি বেসরকারী ইনস্যুরারের প্ল্যান, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য একটি হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি কেনার আগে, আপনাকে কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে:

1. সঠিক তথ্য দিন

তাদের হেলথ ইনস্যুরেন্স প্রপোসালটি পূরণ করার সময়, আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রতিবন্ধকতা এবং আগে থেকেই আছে এমন যে-কোনও অবস্থা সঠিকভাবে জানতে হবে। এটি না করলে ক্লেমের সময় আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন।

2. সঠিক নথিপত্র দিন

আপনাকে কিছু নথি বা মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে হতে পারে। এতে সাধারণত প্রতিবন্ধকতার মাত্রা বোঝার জন্য একজন ডাক্তারের একটি রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে (যেমন- এই প্রতিবন্ধকতা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতাকে কতটা প্রভাবিত করছে)।

আপনাকে একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের কাছ থেকে সরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত কিছু মেডিক্যাল টেস্ট করার জন্যও বলা হতে পারে, এবং এই পরীক্ষা এবং রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ইনস্যুরার সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার ইনস্যুরেন্স আবেদন গ্রহণ করবেন কিনা।

3. প্রিমিয়ামের রাশি ভেবেচিন্তে নিন

একবার আপনার ইনস্যুরেন্স আবেদন একটি প্রাইভেট ইনস্যুরার গ্রহণ করলে, মনে রাখবেন যে আপনার পলিসির জন্য প্রিমিয়াম ইনস্যুরার নির্ধারণ করবে। এটি আপনার প্রতিবন্ধকতা, বয়স, পারিবারিক চিকিৎসা ইতিহাস, আগে থেকেই আছে এমন কোনও শারীরিক সমস্যা, এবং আরও অনেক কিছুর উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হবে। এছাড়াও, আপনার প্রিমিয়ামের উপর 18% জিএসটি চার্জ করা হবে।

4. ট্যাক্স বেনিফিট মনে রাখবেন

যদিও আপনি বেশি প্রিমিয়ামের ব্যপারে চিন্তিত হতে পারেন, তবে মনে রাখবেন প্রতিবন্ধী মানুষরা তাদের হেলথ ইনস্যুরন্সে ট্যাক্স ডিডাকশন বেনিফিট পেতে পারেন।

আয়কর আইনের ধারা 80U আংশিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষদের ₹50,000 পর্যন্ত ট্যাক্স ডিডাকশন দেয়, যেখানে গুরুতরভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ₹1 লাখ পর্যন্ত ট্যাক্স ডিডাকশন হতে পারে।

এবং ধারা 80DD অনুসারে, পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও নির্ভরশীল প্রতিবন্ধী সদস্যের জন্য ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়ামে ডিডাকশন পেতে পারেন।

যেমনটা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য আসলে কয়েকটি হেলথ ইনস্যুরেন্স আছে।

দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বেশিরভাগই সাধারণ হেলথ ইনস্যুরেন্স প্ল্যানের আওতায় থাকবে, কোনো অতিরিক্ত ক্লস যোগ করা হবে না। এমনকি, দুর্ঘটনার আগে যদি তাদের একটি পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট কভার করা থাকে, তবে আপনার অতিরিক্ত আর্থিক নিরাপত্তা এবং কিছু প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সুবিধা থাকবে।

তবে, এটা অবশ্যই লক্ষ করা উচিত যে জন্মগত এবং মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উচ্চ-ঝুঁকির শ্রেণীতে পড়বে এবং তার ফলে হয় সাধারণ হেলথ ইনস্যুরেন্স প্ল্যানের আওতায় নাও থাকতে পারে, অথবা থাকলেও আংশিক কভারেজ পেতে পারে। তাই, তারা উন্নত চিকিৎসা সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারি প্রকল্পগুলি দেখতে পারে।

ভারত সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দুটি বিশেষ হেলথ ইনস্যুরেন্স স্কিম অফার করে:

• নির্মাল্য হেলথ ইনস্যুরেন্স: মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষদের চিকিৎসার জন্য ₹1 লাখ পর্যন্ত কভার করে। এর জন্য প্রি-ইনস্যুরেন্স টেস্টের প্রয়োজন নেই, তবে এই পলিসিটি পেতে একজনকে অবশ্যই ন্যাশনাল ট্রাস্টের সাথে নথিভুক্ত করতে হবে।
• স্বাবলম্বন হেল্থ ইনস্যুরেন্স: এটি যে-কোনও প্রতিবন্ধী মানুষদের দেওয়া যায়, যার বার্ষিক পারিবারিক আয় 3,00,00 টাকার কম।

এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে যা হেল্থ ইনস্যুরেন্সের জন্য আপনার যোগ্যতা নির্ধারণ করবে। এগুলি হল-

• বর্তমান স্বাস্থ্যের অবস্থা: একজন প্রতিবন্ধী মানুষের ইনস্যুরেন্স করার ক্ষেত্রে একজন ইনস্যুরার প্রথম যে বিষয়টি পরীক্ষা করবে তা হল গত কয়েক মাসে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা। এটা তাদের সাথে জড়িত ঝুঁকিগুলি বুঝতে সাহায্য করে। হেল্থ রিপোর্ট, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং আগে থেকে আছে এমন জটিলতাগুলি পরীক্ষা করার জন্য আরও কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে, তারা ইনস্যুরন্স কভারেজ অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
• আয়: প্রতিবন্ধী মানুষদের যোগ্যতা নির্ধারণকারী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাদের প্রিমিয়াম পরিশোধ করার ক্ষমতা। তাই, তারা আপনার উপার্জন ক্ষমতা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং বিবৃতি পরীক্ষা করবে। তবে, অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরের আর্থিকভাবে নির্ভরশীল, এইসব ক্ষেত্রে, তারা পরিবারের সামগ্রিক আয়ও পরীক্ষা করবে। এই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে যে সেই মানুষটির কভার করা হবে কিনা।

যদি আপনি বা পরিবারের কোনো সদস্য প্রতিবন্ধী হন, আশা করি, এখন আপনি হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি কেনার জন্য কী করতে পারেন সে সম্পর্কে আপনার আরও ভালো ধারণা হয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য হেল্থ ইনস্যুরেন্স উন্নতির এখনও অনেক সুযোগ আছে। বর্তমানে, শুধুমাত্র সেই প্রতিবন্ধী মানুষরা যাদেরকে উচ্চ-ঝুঁকিসম্পন্ন হিসাবে ধরা হয় না, তাদের ব্যক্তিগত ইনস্যুরেন্স প্ল্যানেরও অনেক বিকল্প আছে। তবে ভবিষ্যতে আরও সংস্কার ও উন্নতি হবে যাতে প্রত্যেকে, এমনকি যারা গুরুতরভাবে প্রতিবন্ধী তাদেরকেও হেলথ ইনস্যুরন্সের আওতায় আনা যায়।