কোনও হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি খোঁজার সময় আপনি সেটার কভারেজ ছাড়াও অনেক অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন, যেমন ডিডাক্টিবল, কো-পেমেন্ট বা ওয়েটিং পিরিয়ড ইত্যাদি। হেলথ ইনস্যুরেন্সের ক্ষেত্রে এই রকম খেয়াল করার মতো আরেকটি বৈশিষ্ট্য সাব-লিমিট।
ইনস্যুরার আপনার ক্লেম পরিমাণের ওপর একটি পূর্বনির্ধারিত আর্থিক ক্যাপ দিয়ে রাখে, তাকেই বলা হয় সাব-লিমিট। তবে, এ কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে হেলথ ইনস্যুরেন্স সাব-লিমিট সম্পূর্ণ বিল পরিমাণের জন্য প্রযোজ্য নয়, বরং কিছু শর্তের জন্য প্রযোজ্য হবে। হাসপাতালের রুম ভাড়া, নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা, অ্যাম্বুলেন্স চার্জ এবং আরও অনেক কিছুর উপর এই সাব-লিমিট স্থির করা যেতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে, এই সাব-লিমিট আপনার সাম ইনসিওর্ড শতাংশ হিসাবে গণনা করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার এসআই 5 লক্ষ টাকা হলে এবং আপনার রুম ভাড়ার চার্জ 1% ক্যাপ করা থাকলে আপনার ইনস্যুরেন্স 5,000 টাকা পর্যন্ত কভার করবে।
ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তাদের সামগ্রিক ক্লেম কমানোর জন্য সাব-লিমিট স্থির করে। যেহেতু তারা সাধারণত বেশিরভাগ হাসপাতাল দ্বারা চার্জ করা গড় হারে সেট করে থাকে, এটি গ্রাহকদের দ্বারা প্রতারণা এবং মোটা মেডিকেল বিলের ঘটনাও কমাতে পারে।
সমস্ত হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসির সাব-লিমিট থাকে না এবং কিছু ইনস্যুরার এই ধারা অপ্ট আউট করার বিকল্প অফার করে। কিন্তু, সাধারণত, সাব-লিমিট সহ হেলথ ইনস্যুরেন্স প্ল্যানে সাব-লিমিটবিহীন ইনস্যুরেন্সের তুলনায় প্রিমিয়াম কম হবে।
সুতরাং, হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসি নির্বাচনের সময়, সাবধানে সাব-লিমিটগুলি খেয়াল করুন। সাব-লিমিট থাকা আপনার বাজেটের পক্ষে ভাল হলেও, নিশ্চিত করুন সেগুলি আপনার প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট, কারণ সাব-লিমিট সহ স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনাগুলি দীর্ঘমেয়াদে আরও সীমিত কভারেজ প্রদান করতে পারে।
হেলথ ইনস্যুরেন্স প্রধানত তিন ধরনের সাব-লিমিট দেখা যায়। আসুন সেগুলি দেখে নেওয়া যাক যাতে সঠিক ইনস্যুরেন্স পলিসি বেছে নেওয়া আপনার পক্ষে সহজ হয়:
রুম ভাড়া প্রসঙ্গে বলা যায়, আপনার ইনস্যুরার সাধারণত প্রতিদিনের রুম ভাড়া কভার করবে, কিন্তু শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত। এই পরিমাণ সাধারণত সাম ইনসিওর্ড 1-2% বা অন্য কোনও নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধরা হয়।
সুতরাং, আপনার রুম ভাড়ার ক্যাপ প্রতিদিন 4,000 টাকা হওয়ার পর আপনি প্রতিদিন 6,000 টাকার রুম নিলে আপনাকে পকেট থেকে 2,000 টাকার পার্থক্যমূল্য দিতে হবে।
এর ওপরে, কিছু ইনস্যুরার রুমের ধরনেও সীমাবদ্ধতা রাখবে, যেমন শুধুমাত্র সাধারণ ওয়ার্ড বা আধা-ব্যক্তিগত রুম কভার করা হবে। মনে রাখবেন, আপনি যে ধরনের রুম বেছে নিচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে, ডাক্তারের পরামর্শ চার্জ বা অক্সিজেন সরবরাহ ফি ইত্যাদি চিকিৎসা খরচ পরিবর্তিত হতে পারে।
নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা এবং/অথবা রোগের ক্ষেত্রেও প্রায়শই সাব-লিমিট প্রযোজ্য হয়, বিশেষ করে কিছু খুব সাধারণ এবং পূর্ব-পরিকল্পিত পদ্ধতি, যেমন কিডনির পাথর, ছানি, পাইলস, পিত্তথলি, হার্নিয়াস, টনসিল, সাইনাস ইত্যাদি। সাব-লিমিট ক্লজের অধীনে, আপনার ইনস্যুরার এইসব চিকিৎসার জন্য বিলের একটি নির্দিষ্ট অংশ বহন করবে।
উদাহরণ স্বরূপ, আপনার ইনস্যুরেন্সের পরিমাণ হয় 15 লাখ টাকা, কিন্তু আপনার পলিসিতে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য 50% সাব-লিমিট ক্লজ থাকলে, আপনি এই চিকিৎসার জন্য 7.5 লাখ টাকার বেশি দাবি করতে পারবেন না।
কিছু হেলথ ইনস্যুরেন্স প্রদানকারী হাসপাতালে ভর্তির আগের এবং পরবর্তী খরচেও সাব-লিমিট অন্তর্ভুক্ত করে।
আপনার পলিসিতে হাসপাতালে ভর্তিপূর্ব খরচ (যেমন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য) এবং হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পরবর্তী খরচ কভার করা হলে (উদাঃ রিকভারি চলাকালীন ওষুধ, থেরাপি বা পরীক্ষা), সেগুলিও একটি সাব-লিমিটের অধীন হতে পারে।
আমরা উপরে দেখেছি, সাব-লিমিট থাকলে, তা চূড়ান্ত ক্লেম পরিমাণ হ্রাস করে। হাসপাতালের রুম ভাড়া, নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা বা হাসপাতাল পরবর্তী খরচের জন্য, আপনি শুধুমাত্র সাব-লিমিট ক্লজ নির্ধারিত পরিমাণের জন্য ক্লেম করতে পারেন এবং তার বাইরে, আপনাকে নিজের পকেট থেকে অর্থ প্রদান করতে হবে।
আর তাই, আপনার বেশি মূল্যের ইনস্যুরেন্স করা থাকলেও, আপনি এই সাব-লিমিট ক্লজের কারণে আপনার হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসার সমস্ত খরচ ক্লেম করতে পারবেন না।
হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন বা শেষ মুহূর্তে ক্লেম ফাইল করার সময় বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য এই সাব-লিমিট ক্লজগুলি সাবধানে দেখে নিতে ভুলবেন না। এইভাবে আপনি একটি ঝামেলা-বিহীন ক্লেম প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারেন।
তবে আপনি সাব-লিমিট ক্লজ বিহীন ইনস্যুরেন্স কিনতে পারেন, কিন্তু এতে প্রায়শ প্রিমিয়াম বেশি হয়।। সাব-লিমিট ক্লজ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দ্বারা নির্ধারিত হয়, আপনি এই ক্লজ সহ পলিসি নির্বাচন করলে, আপনি আর পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারবেন না।
তাই, কোনও পলিসি কেনার আগে, পলিসি নথিতে উল্লিখিত সাব-লিমিট ক্লজগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝুন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় পরীক্ষা করুন, যেমন অন্তর্ভুক্তি, বর্জন, ডিডাক্টিবল এবং সহ-পেমেন্ট। পলিসিতে প্রদত্ত কভারেজ আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা বা স্বাস্থ্যসেবার খরচের তুলনায় কম মন হলে, আপনি নিজের ইনস্যুরেন্সের পরিমাণ বাড়াতে পারেন, বা এমনকি আর একটি ভিন্ন ইনস্যুরার বেছে নিতে পারেন।
হেলথ ইনস্যুরেন্সের সাব-লিমিট বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনার পলিসি আপনার প্রয়োজনীয়তা মেটতে তৈরি কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে একটি ফ্যাক্টর হতে পারে। সাব-লিমিট ক্লজসহ হেলথ ইনস্যুরেন্স প্ল্যানের প্রিমিয়াম সাব-লিমিট ক্লজবিহীনের তুলনায় কম, তবে সেগুলি দীর্ঘমেয়াদে আরও সীমিত কভারেজ প্রদান করতে পারে। সুতরাং, আপনার হেলথ ইনস্যুরেন্স কেনার আগে নিজের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন এবং বাজেট দুইয়ের সাথে মানানসই কোনও পলিসি সন্ধান করতে ভুলবেন না।