Third-party premium has changed from 1st June. Renew now
ব্যবহৃত কার কেনার টিপস
আপনার বাবা মায়ের আপনাকে প্রথম সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা মনে আছে? জানি সে অনেকদিন আগের কথা, কিন্তু সেই আনন্দের অনুভূতি আজও নিশ্চয় আপনার মনে আছে।
তখন আপনি খুবই ছোট আর বাবা মায়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। আর আজ, আমরা স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে অনেকদূর এগিয়ে এসেছি আর নিজেরাই একটি আরামদায়ক গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
কিন্তু প্রথমেই তো আর আমরা নতুন গাড়ি কিনতে পারি না, তাই ব্যবহৃত গাড়ি কিনেই কিছুদিন কাজ চালানোর কথা ভাবি। তবে কিছু কিছু ব্যাপার এই ব্যবহৃত কার কেনার পথে অন্তরায় হতে পারে, যেমন গাড়ির মূল্য, বৈশিষ্ট্য, কত পুরনো, ক্লেম বা মেরামত এবং অবশ্যই গাড়ি কেনার উদ্দেশ্য।
ভারতে ব্যবহৃত গাড়ি কেনার আগে যে 10টি জিনিস পরীক্ষা করা দরকার
ব্যবহৃত গাড়ির ইতিহাস জানুন: ব্যবহৃত গাড়ির ইতিহাস; যেমন সেটি কত পুরনো, বিক্রির কারণ এবং সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। কোনও ক্লেম থাকলে বিক্রেতা বা কোম্পানিকে বিশদে জানাতে বলুন। অতীতে গাড়িটি কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা জানার জন্য নিজেই খোঁজ খবর করুন।
গাড়ির পেসমেকার - অর্থাৎ ইঞ্জিন পরীক্ষা করুন: যেকোনও গাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি নিজের চোখে পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত করুন আপনি কোনও লিক, ফাটা হোস, ক্ষয় এবং বেল্ট দেখতে পাচ্ছেন না । এছাড়াও, ডিসকালারেশন হয় কিনা জানার জন্য তেল এবং ট্রান্সমিশন ফ্লুইড পরীক্ষা করুন। কোনও ভালো ইঞ্জিনে, তেল হালকা বাদামী এবং ট্রান্সমিশন ফ্লুইড গোলাপী বা লাল হওয়া উচিত।
রাস্ট বা রঙের ক্ষয়ক্ষতি: গাড়িতে বেশি রাস্ট থাকলে কেনার কথা দ্বিতীয় বার বিবেচনা করুন। তবে, ভাল দামে পেলে ছোট খাটো রঙ চটা উপেক্ষা করা যেতে পারে।
কত মাইল চলেছে: ব্যবহৃত গাড়ি বয়সের তুলনায়, এটি কত মাইল চলেছে আপনার জানা উচিত। এর থেকে আপনি সহজেই গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি সনাক্ত বা মূল্যায়ন করতে পারবেন।
টায়ারের অবস্থা: অসমান টায়ার গাড়ির অ্যালাইনমেন্ট প্রভাবিত করতে পারে। পরীক্ষা করে দেখুন চারটি চাকাই সমান্তরালে মিলে যায় কিনা। সঠিক অ্যালাইনমেন্ট না থাকলে গাড়ি ডান বা বামে টাল খাবে। তাই, টায়ার চেক করতে চাইলে একটি টেস্ট ড্রাইভ নিন।
ইলেকট্রনিক সামগ্রী পর্যালোচনা করুন: মিউজিক সিস্টেম, এয়ার কন্ডিশনার এবং ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে সঠিকভাবে কাজ করা উচিত। সেগুলি কাজ করার অবস্থায় আছে কিনা যাচাই করার জন্য চালিয়ে দেখুন।
কুশন এবং কভার চেক করুন: গাড়ির সিট কভার সারানো সত্যিই ব্যয়বহুল। চামড়ার আবরণে কোনও ফাটল, দাগ, কাটা যেন না থাকে।
টেস্ট ড্রাইভ নিন: গাড়ি টেস্ট ড্রাইভে নিয়ে যাওয়া অপরিহার্য। এবড়ো খেবড়ো একটা রাস্তা বেছে নিন। এই ধরনের রাস্তা আপনাকে ব্রেক, সাসপেনশন, এবং অ্যাক্সিলারেশন পরীক্ষা করতে সাহায্য করবে।
মেকানিক দিয়ে পরীক্ষা করান: আপনি যে গাড়িটি কিনতে চাইছেন, তার বাকি যন্ত্রাংশ নিয়ে আপনি খুশি হলেও, শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ একজন মেকানিক দিয়ে পরীক্ষা করানো। আপনার বিশ্বস্ত মেকানিককে ডেকে সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ সব অংশ যেমন বেল্ট, ইঞ্জিন, ব্যাটারি ইত্যাদি ভালো করে পরীক্ষা করতে বলুন। ক্রয় চূড়ান্ত করার আগেই এই পরীক্ষা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করতে ভুলবেন না: যেসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি আপনাকে পরীক্ষা করতে হবে সেগুলি নিচে বলা হল:
- গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কপি পরীক্ষা করে তাতে উল্লিখিত বিশদ গাড়ির সাথে মিলিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন ইঞ্জিন এবং চ্যাসিস নম্বর সঠিক হওয়া উচিত, নাহলে কোনও ক্লেম করার সময় আপনার সব কাজ গোলমাল হয়ে যাবে।
- আরটিও-তে উপলব্ধ ফর্ম 32 এবং 35 দেখুন, আপনার পছন্দের সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির কোনও ঋণ বকেয়া থাকা উচিত নয়।
- গাড়িটি পূর্ববর্তী মালিকের ফিন্যান্সে কেনা হলে তাকে নো অবজেকশন দিতে অনুরোধ করুন।
- এলপিজি/সিএনজি ফিটিংস থাকলে গাড়ির বাই-ফ্যুয়েল সার্টিফিকেশন।
- বৈধ দূষণ নিয়ন্ত্রণাধীন (পিইউসি) সার্টিফিকেট।
- সমস্ত রোড ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে কি না পরীক্ষা করার জন্য সার্ভিস বুক।
আপনার স্বপ্নের গাড়ির সবরকম পরীক্ষা করার পরে, পরবর্তী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইনস্যুরেন্স পলিসি। গাড়ির মালিককে জিজ্ঞেস করুন তার ইনস্যুরেন্স পলিসি আছে কি না? তা থেকে আপনি কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় জানতে পারবেন। যেমন:
- পূর্ববর্তী মালিক নিশ্চয়ই গাড়ির যথেষ্ট যত্ন নিয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক অবশ্যই কার ইনস্যুরেন্স পলিসি কিনবেন।
- অতীত ক্লেমের অভিজ্ঞতা। এটা জানার জন্য ভারতে আর অন্য কোনও উপায় নেই।
- সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির পলিসি এখনও বিদ্যমান থাকলে, আপনার নামে ইনস্যুরেন্স পলিসি স্থানান্তর করার প্রয়োজন।
আপনার গাড়ির কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট যে কোনও ধরনের আইনি সমস্যা এড়িয়ে চলতে চাইলে কার ইনস্যুরেন্স কেনা দরকার । কোনও দুর্ঘটনার পরে উদ্ভূত আর্থিক দায় থেকে ইনস্যুরেন্স পলিসি আপনাকে রক্ষা করে। গাড়ি এবং আহত থার্ড পার্টি দুটিই কভার করে সর্বাধিক সুরক্ষা প্রদান করে।
ভারতে, মালিক-চালকের ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা কভারের পাশাপাশি একটি থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি পলিসি থাকা বাধ্যতামূলক। মনে করুন, আপনি জানতে পেরেছেন আপনার পছন্দের ব্যবহৃত গাড়িটির ইতিমধ্যেই একটি ইনস্যুরেন্স পলিসি আছে। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে গাড়ির আরসি ট্রান্সফারের পাশাপাশি ইনস্যুরেন্স ট্রান্সফার ত্বরান্বিত করতে হবে।
ইনস্যুরেন্স ট্রান্সফার কিভাবে করতে হয় জানেন না? সেখানে পৌঁছানোর আগে, অপেক্ষা করুন, আপনাকে নিজের নামে সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির আরসি পেতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিজের নামে কিভাবে ট্রান্সফার করবেন?
নিজের নামে আরসি ট্রান্সফার করার জন্য, নিকটস্থ আরটিও যান এবং নিচের পদক্ষেপ অনুসরণ করুন।
- ফর্ম 29 এবং ফর্ম 30 চেয়ে নিন। এই ফর্মগুলি ঠিকঠাক পূরণ করে আপনি আর আগের মালিক পাশাপাশি যথাযথভাবে স্বাক্ষর করুন
- আপনি যে সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়িটি কিনবেন সেটি আপনার জুরিসডিকশনের বাইরে হলে আরটিও থেকে এনওসি পাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
- স্থানীয় আরটিও যাতে ট্রান্সফারের কাজ শুরু করতে পারে তার জন্য সব ফর্ম পূরণ করে জমা দিন।
প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে, 15 থেকে 18 দিনের মধ্যে আরটিও আপনাকে একটি রসিদ দেবে। আপনি মাত্র 40-45 দিনের মধ্যে ট্রান্সফার্ড আরসি-এর একটি চূড়ান্ত কপি পাবেন।
ইনস্যুরেন্সের বিষয়ে ফিরে আসি, এবার নিজের নামে ইনস্যুরেন্স ট্রান্সফার করার উপায়গুলি জানাই। আপনি নিজের নামে আরসি পেয়েছেন কিন্তু ইনস্যুরেন্স এখনও পূর্বের মালিকের নামে থাকলে তা আপনার কোন উপকারে আসবে না। সময় বাঁচানোর এবং নিজের সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি রাস্তায় চালাতে শুরু করার জন্য, পাশাপাশি ইনস্যুরেন্স ট্রান্সফার প্রক্রিয়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু কিভাবে এটা করা যাবে তার কোনও ধারনা আছে?
ব্যবহৃত গাড়ির ইনস্যুরেন্স কীভাবে ট্রান্সফার করবেন?
সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির জন্য যখন ইনস্যুরেন্স পলিসি বিদ্যমান থাকলে আপনি একটাই কাজ করতে পারেন, নাম পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করা। এই তথ্য পরিবর্তন ইনস্যুরেন্স কপিতে করা উচিত। শুধু ফর্ম 29 এবং ফর্ম 30-এর ইনস্যুরারের রসিদের সাথে জমা দিন।
এজন্য আপনি ইনস্যুরারের অফিসে যেতে পারেন বা কোনও ইনস্যুরেন্স এজেন্ট বা ব্রোকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং চিয়ার্স!! আপনি নিজের সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি ইনস্যুরেন্স করা হয়ে গেছে।
একটা ব্যাপার সবার জানা উচিত যে একটি ক্লেম-মুক্ত বছরের জন্য, আপনি নো ক্লেম বোনাস অর্জন করেন। এবার, ব্যবহৃত গাড়ির আরসি ট্রান্সফার করা যেতে পারে, কিন্তু এনসিবি করা যায় না। সুতরাং, পলিসির অবশিষ্ট সময়ের জন্য, সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির ক্রেতাকে প্রয়োজনীয় পার্থক্য পরিমাণ দিতে হবে।
ব্যবহৃত গাড়ির কোনও ইনস্যুরেন্স পলিসি না থাকলে কী করবেন?
এমনও হতে পারে, আপনি যে ব্যবহৃত গাড়িটি কেনার পরিকল্পনা করছেন তার কোনও ইনস্যুরেন্স কভার নেই। তাহলে এখন আপনি কি করবেন? নিজেই একটি কার ইনস্যুরেন্স পলিসি কিনুন!
কোন ইনস্যুরেন্স কভার সবচেয়ে ভালো - কম্প্রিহেনসিভ বা থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি?
নিজের গাড়ির জন্য ইনস্যুরেন্স কভারেজ নির্বাচন করা, তা ব্যক্তিগত হোক বা বাণিজ্যিক, সম্পূর্ণরূপে মালিকের উপর নির্ভরশীল। মোটরযান আইন, 1988 অনুযায়ী থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি আবশ্যিক কিন্তু ওন ড্যামেজ ঐচ্ছিক। তা সত্ত্বেও একটি কম্প্রিহেনসিভ কভার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি একাধিক কভারেজ প্রদান করে।
আপনি গাড়ির জন্য শুধুমাত্র থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি কভার বেছে নিতে পারেন যখন:
- ব্যবহৃত গাড়ির বয়স 10 বছর বা তার বেশি।
- গাড়ির ব্যবহারও কম তাই ক্ষয়ক্ষতিও কম। ধরা যাক, আপনি দেশের বাইরে থাকেন এবং ফিরে আসলে মাসে একবার গাড়ি ব্যবহার করেন।
- আপনার কি মনে হয় গাড়ির ক্ষতির জন্য আপনি যেকোনও পরিমাণের ব্যয় বহন করতে পারেন।
সব কাজ শেষ হলে ইনস্যুরেন্স পলিসিসহ গাড়িটি আপনার নামে ট্রান্সফার করা হয়, আর আপনিও উত্তেজনা এবং আত্মবিশ্বাসের ভরপুর হয়ে ওঠেন। এখন আপনি নিজের গাড়ির মালিক, নিরাপদে চালান এবং বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ান।