ডিজিট ইন্স্যুরেন্সে স্যুইচ করুন

ভারতে পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?

আপনার বিদেশ ভ্রমণের সময় বহনযোগ্য সামগ্রীর মধ্যে পাসপোর্ট একটি অপরিবর্তনীয় নথি। সাধারণত, এই নথিগুলি 10 বছরের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ অবধি বৈধ, তারপর আপনাকে নিজের পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য আবেদন করতে হবে। 

ভারতীয় পাসপোর্ট রিইস্যু করার সময় আপনার যা যা জানা প্রয়োজন নিম্নলিখিত নিবন্ধে পাবেন। এর সাহায্যে আপনি পাসপোর্ট রিইস্যু এবং রিনিউ করার মধ্যে পার্থক্য সনাক্ত করতে পারবেন।

পাসপোর্ট রিইস্যু করা কাকে বলে?

পাসপোর্ট রিইস্যু করা বলতে বোঝায় যখন পাসপোর্টধারীর একটি নতুন পুস্তিকা প্রয়োজন। মনে রাখবেন কোনও পাসপোর্ট রিইস্যু করা এবং পুনর্নবীকরণ একই জিনিস নয়। দুটির মধ্যে প্রধান পার্থক্য নিচে উল্লেখ করা হলো। এছাড়াও, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পাসপোর্ট রিইস্যু করার প্রয়োজন হতে পারে, যা নিবন্ধে পরে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

আসুন প্রথমে পাসপোর্ট রিইস্যু এবং রিনিউ করার মধ্যে পার্থক্যগুলি বোঝা যাক।

পাসপোর্ট রিইস্যু করা কখন প্রয়োজনীয়?

আপনি এই দুটি কাজের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন হওয়ায়, এবার দেখুন কোন পরিস্থিতিতে আপনাকে নিজের বিদ্যমান নথির রিইস্যু বিবেচনা করতে হবে –

  • আপনার পাসপোর্টের বৈধতা আগামী 3 বছরের মধ্যে শেষ হতে চলেছে বা ইতিমধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

  • আপনার বিদ্যমান পাসপোর্টের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে, অথবা কোনও কারণে বিকৃত হয়ে গেছে।

  • আপনার বিদ্যমান পাসপোর্ট বই-এর সমস্ত পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গেছে।

  • জন্ম তারিখ, নাম, বাসস্থানের ঠিকানা এবং অন্যান্য কিছু নির্দিষ্ট বিশদ আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে।

  • নিজের পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললে, রিইস্যু করা আবশ্যক। এই ক্ষেত্রে আপনাকে রিইস্যু আবেদনের পাশাপাশি একটি এফআইআর (FIR) কপি জমা দিতে হবে।

  • আপনার বর্তমান পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে 3 বছর আগে শেষ হয়ে গেলেও, পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য আবেদন করতে হবে।

উপরে উল্লিখিত পরিস্থিতিগুলির মুখোমুখি হলে আপনার পক্ষে পাসপোর্ট রিইস্যু করার প্রক্রিয়া জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য আবেদন করবেন

নিজের পাসপোর্ট কিভাবে রিইস্যু করবেন ভেবে চিতিত, তাহলে জেনে রাখুন আপনি এ কাজটি অনলাইন এবং অফলাইন দুভাবেই করতে পারেন। এই উভয় পদ্ধতির আবেদনের পদক্ষেপগুলি এখানে বিশদে জানানো হল।

কিভাবে অনলাইনে পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য আবেদন করবেন?

অনলাইনে পাসপোর্ট রিইস্যু করার পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হল - 

  • ধাপ 1: পাসপোর্ট সেবা পোর্টাল পরিদর্শন করুন এবং আপনার ইতিমধ্যে কোনও অ্যাকাউন্ট না থাকলে নিজেকে নিবন্ধন করুন।

  • ধাপ 2: নিবন্ধন হয়ে গেলে, সাইন ইন করুন এবং 'ফ্রেশ পাসপোর্ট অ্যাপ্লাই করুন/ পাসপোর্ট রিইস্যু করুন' বেছে নিন।

  • ধাপ 3: এরপর, সমস্ত ব্যক্তিগত বিশদ জানিয়ে অনলাইন ফর্ম পূরণ করুন এবং 'জমা দিন' ক্লিক করুন।

  • ধাপ 4: এখন, সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ফি প্রদান করার জন্য 'পে এবং শিডিউল অ্যাপয়েন্টমেন্ট' বোতাম টিপুন। মনে রাখবেন অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্ধারণ করার আগে আপনি শুধুমাত্র অনলাইন পেমেন্ট করতে পারেন।

এর পরে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য সমস্ত পাসপোর্ট রিইস্যু করার নথি নিয়ে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে যান।

অফলাইনে পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?

এই অফলাইন পরিষেবা ব্যবহার করতে চাইলেও আপনাকে একবার পাসপোর্ট সেবা ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে হবে। 

পরবর্তী ধাপগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো- 

  • ধাপ 1: 'ফর্ম এবং হলফনামা' বিভাগে নেভিগেট করুন এবং ই-ফর্ম ডাউনলোড করার জন্য "পাসপোর্ট রি-ইস্যু" নির্বাচন করুন।

  • ধাপ 2: এছাড়াও এই পোর্টাল থেকে পুলিশ ছাড়পত্র শংসাপত্র (পিসিসি) ডাউনলোড করুন। ই-ফর্ম সহ এই পিসিসি'র (PCC) একটি প্রিন্টআউট নিন।

  • ধাপ 3: ফর্ম পূরণ করুন, পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি সংযুক্ত করুন এবং আপনার নিকটবর্তী পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।

অনলাইনে রিইস্যুের জন্য অর্থ প্রদান করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন।

পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য কী কী নথি প্রয়োজন?

রিইস্যু ফর্মের সাথে, প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত পাসপোর্ট রিইস্যু নথি জমা দিতে হবে - 

  • বয়সের প্রমাণ

  • আবাসিক ঠিকানার প্রমাণ

  • পরিচয়ের প্রমাণ

  • আবেদনকারীর 2টি পাসপোর্ট আকারের ছবি

  • বিদ্যমান পাসপোর্ট পুস্তিকার প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠার সত্যায়িত ফটোকপি

  • মূল বিদ্যমান পুস্তিকা

  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট আবেদনের রসিদ বা অনলাইন আবেদন পৃষ্ঠার চূড়ান্ত পৃষ্ঠা। আবেদনের ফি প্রদান এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট সময়সূচীর প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হয় এই পৃষ্ঠাটি।

পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য কি পুলিশ যাচাইকরণ প্রয়োজন?

পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য সফলভাবে আবেদন করার পর, আপনার পুলিশ যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার হতে পারে বা নাও হতে পারে। তাছাড়া, এটি মূলত আপনার পাসপোর্ট রিইস্যু করার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি নাম বা আবাসিক ঠিকানার মতো ব্যক্তিগত বিশদ পরিবর্তন করার জন্য রিইস্যু আবেদন করেন, পাসপোর্ট অফিসের যাচাইকরণ প্রয়োজন। সমস্ত নতুন বিশদ সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য এটি করা হয়।

যাইহোক, আপনি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বা পুস্তিকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য পুলিশ যাচাইকরণ আগে থেকে নিশ্চিত নাও হতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ রিইস্যু করা নথি পাওয়ার পর পোস্ট-পুলিশ যাচাইকরণের জন্য পরিদর্শনের আদেশ দিতে পারে।

পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য আপনাকে কত ফি দিতে হবে?

 

নিম্নলিখিত টেবলে ভারতীয় পাসপোর্ট রিইস্যু করার ফি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হল।

 

বিভাগ সাধারণ ফি তৎকাল ফি
36 পৃষ্ঠার রিইস্যু করা পাসপোর্ট ₹1500 ₹2000
60 পৃষ্ঠার রিইস্যু করা পাসপোর্ট ₹2000 ₹2000
নাবালকের জন্য 60 পৃষ্ঠার রিইস্যু করা পাসপোর্ট ₹1000 ₹2000
আগের পাসপোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে, হারিয়ে বা চুরি গেলে 36 পৃষ্ঠার রিইস্যু করা পাসপোর্ট ₹3000 ₹2000
আগের পাসপোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে, হারিয়ে বা চুরি গেলে 60 পৃষ্ঠার রিইস্যু করা পাসপোর্ট ₹3500 ₹2000

পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য কত দিন সময় লাগে?

স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতিতে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় 15 দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। যাইহোক, তাত্‌কাল মোডে আবেদন করার সময়, আপনি 7-10 দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারেন। পাসপোর্ট রিইস্যু করার সঠিক সময় বিভিন্ন কারণ সাপেক্ষে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন প্রাক-পুলিশ যাচাইকরণ বা পোস্ট-পুলিশ যাচাইকরণের প্রয়োজন।

কিভাবে পাসপোর্ট রিইস্যু স্ট্যাটাস চেক করবেন?

নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির মধ্যে যে কোনও একটি ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে নিজের রিইস্যু আবেদনের স্থিতি পরীক্ষা করতে পারেন -

পাসপোর্ট সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে

  • ধাপ 1: পাসপোর্ট সেবা ওয়েবসাইট পরিদর্শন করুন।

  • ধাপ 2: 'অ্যাপ্লিকেশন স্থিতি ট্র্যাক করুন' বারে ক্লিক করুন।

  • ধাপ 3: পরবর্তী‌ পৃষ্ঠায়, আবেদনের ধরন নির্বাচন করুন, জন্ম তারিখ এবং ফাইল নম্বর লিখুন।

  • ধাপ 4: আপনার আবেদন কতদূর প্রক্রিয়া করা হয়েছে তা দেখার জন্য স্ট্যাটাস ট্র্যাক করুন' ক্লিক করুন।

MPassport সেবা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে

আপনার অ্যান্ড্রয়েড বা iOS ফোনে ডাউনলোড করার পরে mPassport সেবা অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন করুন। স্থিতি অ্যাক্সেস করার জন্য আপনাকে নিজের জন্ম তারিখ এবং আবেদন ফাইল নম্বর লিখতে হবে।

উপরন্তু, অফলাইনে রিইস্যু স্থিতি সম্পর্কে তথ্য অর্জন করাও সম্ভব। এখানে একই কাজ করার একাধিক উপায় আছে - 

  • এসএমএস ট্র্যাকিং- আপনার নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর থেকে 9704100100 নম্বরে একটি এসএমএস পাঠান। এসএমএসে 'স্ট্যাটাস ফাইল নম্বর' টাইপ করুন।

  • ন্যাশনাল কল সেন্টার- স্বয়ংক্রিয় ইন্টার‍অ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্সে স্ট্যাটাস জানার জন্য সকাল 8 am থেকে রাত 10 pm -এর মধ্যে 18002581800 নম্বরে কল করুন।

পাসপোর্ট রিনিউ এবং রিইস্যু করা কিভাবে আলাদা?

পাসপোর্ট রিইস্যু এবং রিনিউ করার ব্যাপারে ভারতীয়দের মধ্যে প্রচুর বিভ্রান্তি আছে। প্রায়শই, এই দুই শব্দ একে অপরের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, তাদের কার্যকারিতা ভিন্ন।

এখানে বলা হল কিভাবে -

পাসপোর্ট রিইস্যু পাসপোর্ট রিনিউ
স্ট্যান্ডার্ড ভারতীয় পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেগুলি রিইস্যু করা প্রয়োজন। প্রথম ইস্যু হওয়ার 10 বছর পর এই মেয়াদ শেষ হয়। স্বল্পমেয়াদী পাসপোর্টধারীদের জন্য রিনিউ করা আবশ্যক। সাধারণত, এই বিশেষ পাসপোর্টগুলির মেয়াদ থাকে 5 বছর, পরে কেউ 10 বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারে।
পাসপোর্টধারীরা রিইস্যু করার পর একটি নতুন পুস্তিকা পাবেন। রিনিউ করার পরে নাগরিকের কাছে থাকা বর্তমান পুস্তিকার পরিবর্তন হয় না।

এখন কিভাবে আপনার পাসপোর্ট রিইস্যু করা যায় আপনি জেনেছেন তাই নিশ্চিত করুন যাতে আপনার আবেদন করতে দেরি না হয়। প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান থাকার ফলে, পাসপোর্ট রিইস্যু করা আপনার পক্ষে অসুবিধা হবে না!

 

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী

পাসপোর্ট নম্বর কি পুনরায় ইস্যু করার পর পরিবর্তন হয়?

পাসপোর্ট রিইস্যু করার পরে আপনার আগের পাসপোর্ট নম্বর পরিবর্তন হবে না। শুধু বৈধতা বৃদ্ধি পাবে।

রিইস্যু করার পর আপনার পুরানো পাসপোর্ট পুস্তিকার কি হবে?

আপনার কাছে পুরানো পুস্তিকাটি থাকলে আপনাকে এটি রিইস্যু করার সময় জমা দিতে হবে। আগেরটি হারিয়ে গেলে আপনার নতুন পুস্তিকা ইস্যু করার পরে সেটি বাতিল বা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

পাসপোর্ট রি ইস্যু করার জন্য আবেদনের ফি কত?

পাসপোর্ট রিইস্যু করার জন্য আবেদন ফি 36 পৃষ্ঠার জন্য ₹ 1500, এবং 60 পৃষ্ঠার জন্য ₹ 2000।